পেট্রোলিয়াম রফতানিকারক দেশগুলোর সংস্থা ও তার সহযোগীদের সংগঠন ওপেক প্লাস আগামী বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন বাড়াতে পারে। গতকাল এশিয়া-প্যাসিফিক পেট্রোলিয়াম কনফারেন্সে (এপিপিইসি) এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটসের গবেষণা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট জিম বুরখার্ড এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর রয়টার্স।
কনফারেন্সে জিম বুরখার্ড বলেন, ‘আমরা মনে করছি ২০২২ সালের পর প্রথমবারের মতো আগামী বছর ওপেক প্লাস জ্বালানি তেলের উত্তোলন বাড়াবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘উত্তোলন বাড়াতে ওপেক প্লাসের কয়েকটি দেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। কিছু দেশ আবার এরই মধ্যে বেঁধে দেয়া কোটার তুলনায় বেশি উত্তোলন করছে।’
ওপেক প্লাস অক্টোবর ও নভেম্বরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে গত সপ্তাহে পণ্যটির দাম নয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে যাওয়ার পর সংগঠনটি উত্তোলন বৃদ্ধির সময়সীমা দুই মাস পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওপেক প্লাস জানায়, প্রয়োজনে এটি উত্তোলন কমানো বা অন্য যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম মূলত প্রধান অর্থনীতির দেশ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা হ্রাসের উদ্বেগের কারণে চাপের মধ্যে রয়েছে। গ্রীষ্মের ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা সত্ত্বেও চলতি বছরের শুরুর তুলনায় বর্তমানে কমেছে।
গ্লোবাল এনার্জি ট্রেডার গানভরের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান টরবিয়র্ন টর্নকুইস্ট একই সম্মেলনে বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ব্যবহারের তুলনায় বেশি জ্বালানি তেল উত্তোলন হয় এবং কয়েক বছরের মধ্যে ভারসাম্য আরো খারাপ হতে চলেছে। তবে এ সমস্যা ওপেকের নয়। কারণ সংগঠনটি জ্বালানি তেল উত্তোলনের বিষয়টি পরিচালনা করে। কিন্তু ওপেকভুক্ত দেশগুলো ছাড়া অন্যান্য দেশের উত্তোলন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার জন্য এটিই যথেষ্ট।’
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (আইইএ) পূর্বাভাস অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের সরবরাহ চলতি বছর দৈনিক গড়ে ৭ লাখ ৭০ হাজার ব্যারেল বেড়ে মোট সরবরাহ দৈনিক ১০ কোটি ৩০ লাখ ব্যারেলে পৌঁছবে।
কনফারেন্সে বহুজাতিক কমোডিটিস কোম্পানি ট্রাফিগুরার হেড অব অয়েল বেন লাকক বলেন, ‘বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনে নিম্নমুখী চাহিদার কারণে জ্বালানি তেলের বাজার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। শিগগির বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে নেমে যেতে পারে। এমনকি ওপেক প্লাসভুক্ত দেশগুলো উত্তোলন না বাড়ালেও সরবরাহ বেশি হতে চলেছে।’
এদিকে চীনে চাহিদা কমে যাওয়ায় আগামী বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দামের পূর্বাভাস সংশোধন করেছে ব্যাংক অব আমেরিকা (বিওএফএ)। গত শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ব্যাংকটি জানায়, আগামী বছর ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি ৫ ডলার কমে ৭৫ ডলারে নেমে যেতে পারে।
ব্যাংকের বিশ্লেষকদের মতে, আগামী বছর বিশ্বব্যাপী দৈনিক গড়ে ১১ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়তে পারে। এর মধ্যে ওপেকবহির্ভূত দেশগুলো থেকে সরবরাহ বাড়তে পারে দৈনিক গড়ে ১৬ লাখ ব্যারেল।