
২০২৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডাটা সেন্টারগুলো মোট বিদ্যুতের ৪.৪% ব্যবহার করেছে এবং ২০২৮ সালের মধ্যে এটি ১২% পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডাটা সেন্টারগুলোর বেশিরভাগ শক্তি ব্যয় হয় চিপ থেকে চিপে ডাটা স্থানান্তর করতে। কানাডার ওটাওয়া ভিত্তিক Hyperlume এই প্রক্রিয়াকে আরও শক্তি-সাশ্রয়ী ও দ্রুততর করতে কাজ করছে।Hyperlume এমন একটি নতুন ধরনের microLED তৈরি করেছে, যা ডাটা স্থানান্তর করতে প্রচলিত কপার-ভিত্তিক সংযোগের চেয়ে বেশি কার্যকর। সাধারণ কপার তারের পরিবর্তে এই microLEDs ব্যবহার করলে কম শক্তি লাগবে এবং গতি আরও বাড়বে। Hyperlume-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং CEO মোহসেন আসাদ জানিয়েছেন, কোম্পানিটি মূলত সেই গবেষণার স্বাভাবিক সম্প্রসারণ, যা তিনি এবং তার সহ-প্রতিষ্ঠাতা হোসেইন ফারিবোরজি Hyperlume তৈরির আগে করছিলেন। আসাদের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অভিজ্ঞতা তাকে চিপ-টু-চিপ এবং র্যাকের মধ্যে ডাটা আদান-প্রদানের উপায় খুঁজতে সাহায্য করেছে, আর ফারিবোরজি কম-পাওয়ার বৈদ্যুতিক সার্কিট ডিজাইনের বিশেষজ্ঞ।আসাদ বলেছেন যে তিনি microLED এবং ডাটা ট্রান্সফার নিয়ে কাজ করছিলেন, ঠিক তখনই AI-এর ব্যাপক উত্থান এবং চিপ-টু-চিপ ডাটা আদান-প্রদানের শক্তি চাহিদা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। সবকিছু মিলিয়ে তারা বিশাল বাজারের সুযোগ দেখতে পান। চিপ-টু-চিপ যোগাযোগে সবসময়ই শক্তি ব্যয় এবং ল্যাটেন্সি বা ডাটার বিলম্ব একটি বড় সমস্যা ছিল, তবে AI-এর দ্রুত বিকাশের ফলে এটি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ল্যাটেন্সি সমস্যার সমাধান করতে পারলে শুধু বিদ্যমান চিপ সংযোগগুলির গতি বাড়বে না, বরং অতিরিক্ত চিপ ক্ষমতাও ব্যবহার করা সম্ভব হবে, যা আগে ল্যাটেন্সি সীমাবদ্ধতার কারণে সম্ভব ছিল না। আসাদ মনে করেন যে যদি তারা ল্যাটেন্সির এই সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধান করতে পারেন, তবে চিপগুলো আরও দ্রুত কাজ করতে পারবে এবং বড় ভাষার মডেলগুলো চালানোর জন্য চিপগুলোর প্রায় শূন্য ল্যাটেন্সিতে যোগাযোগ করা দরকার।২০২২ সালে Hyperlume প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তারা প্রথমে বিদ্যমান প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডাটা সেন্টারের ল্যাটেন্সি সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজছিল। সিলিকন-ভিত্তিক সংযোগ ব্যবহার করা যেত, কিন্তু এটি বাণিজ্যিকভাবে খুব ব্যয়বহুল হয়ে পড়ত। একইভাবে, লেজার প্রযুক্তিও অত্যন্ত ব্যয়সাপেক্ষ ছিল। তাই Hyperlume স্বল্পমূল্যের microLED ব্যবহার করে এটিকে এমনভাবে পরিবর্তন করে, যাতে এটি চিপ-টু-চিপ দ্রুত ডাটা স্থানান্তর করতে পারে, প্রায় ফাইবার অপটিক সংযোগের মতো কিন্তু কম খরচে। Hyperlume-এর সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হলো অতি-দ্রুত microLED এবং কম শক্তিতে কাজ করা একটি ASIC (Application-Specific Integrated Circuit), যা পুরো সিস্টেম চালায় এবং অন্যান্য চিপের সাথে সংযোগ স্থাপন করে।Hyperlume বর্তমানে কয়েকটি প্রাথমিক গ্রাহকের সঙ্গে কাজ করছে, যাদের বেশিরভাগই উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত। কোম্পানিটি প্রযুক্তিটি নিখুঁত করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং হাইপারস্কেল ডাটা সেন্টার কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে প্রচুর আগ্রহ পাচ্ছে। এছাড়াও ক্যাবল নির্মাতা এবং অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানও এই প্রযুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে।আসাদ বলেছেন যে প্রথম ধাপে তারা এই প্রাথমিক গ্রাহকদের সঙ্গে কাজ করতে চান, এবং একবার প্রযুক্তিটি সফলভাবে ডাটা সেন্টারগুলোর মধ্যে ব্যবহৃত হলে, তারা আরও বড় বাজারের জন্য প্রস্তুত হতে পারবে। Hyperlume সম্প্রতি BDC Capital-এর Deep Tech Venture Fund এবং ArcTern Ventures-এর নেতৃত্বে ১২.৫ মিলিয়ন ডলারের একটি বিনিয়োগ সংগ্রহ করেছে। এতে MUUS Climate Partners, Intel Capital এবং SOSV-এর মতো বিনিয়োগকারীরাও অংশ নিয়েছে।এই নতুন তহবিল Hyperlume-কে আরও প্রকৌশলী নিয়োগ করতে এবং তাদের প্রযুক্তি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ সংগ্রহ করতে সাহায্য করবে, যাতে এটি আরও বেশি গ্রাহকের হাতে পৌঁছাতে পারে। ভবিষ্যতে, কোম্পানিটি তাদের ব্যান্ডউইথ আরও বাড়াতে চায়, যাতে এটি পরবর্তী প্রজন্মের শক্তিশালী ডাটা সেন্টারের জন্য প্রস্তুত থাকে। Hyperlume এখন মূলত অপটিক্যাল সংযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে, যা চিপ এবং সার্কিট বোর্ডগুলোর মধ্যে সংযোগ তৈরি করবে, তবে ভবিষ্যতে এটি একটি AI সংযোগ প্রদানকারী সমাধান হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে চায়।