
AI কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতারা প্রায়ই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে সাহসী দাবি করেন, বিশেষ করে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এর বিপ্লব ঘটানোর সম্ভাবনা নিয়ে। তবে Hugging Face -এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান বিজ্ঞানী থমাস উলফ বিষয়টি একটু ভিন্নভাবে দেখেন।সম্প্রতি এক্স (আগের টুইটার)-এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে উলফ জানিয়েছেন, যদি এআই গবেষণায় বড় ধরনের অগ্রগতি না আসে, তবে এটি কেবল ‘হ্যাঁ-মানব’ হয়ে যাবে, অর্থাৎ, যা বলা হবে শুধু সেটাই অনুসরণ করবে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, বর্তমান এআই যেভাবে উন্নত হচ্ছে, তাতে এটি নতুন বা সৃজনশীল সমাধান দিতে পারছে না। এর ফলে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এটি সত্যিকারের কোনো বড় আবিষ্কার আনতে পারবে না, যা নোবেল পুরস্কার জেতার মতো যুগান্তকারী হতে পারে।উলফ বলেন, অনেক মানুষ মনে করেন, আইজ্যাক নিউটন বা আলবার্ট আইনস্টাইন ছিলেন কেবল খুব ভালো ছাত্র, এবং প্রতিভাবান হওয়া মানেই একজন টপ-১০% ছাত্রের ক্ষমতাকে স্কেল-আপ করা। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। তিনি ব্যাখ্যা করেন, আইনস্টাইন শুধু বিদ্যমান প্রশ্নের উত্তর খোঁজেননি, বরং নতুন প্রশ্ন তুলেছেন, যা আগে কেউ ভাবেনি।তাঁর মতে, যদি আমরা সত্যিকারের একজন আইনস্টাইনের মতো এআই তৈরি করতে চাই, তাহলে আমাদের এমন সিস্টেম দরকার, যা শুধু উত্তর দিতে পারবে না, বরং নতুন প্রশ্ন তুলতে পারবে, যা আগে কেউ ভাবেনি বা সাহস করেনি জিজ্ঞেস করতে।উলফের এই মতামত অন্যান্য এআই নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে বেশ পার্থক্যপূর্ণ। OpenAI-এর CEO স্যাম অল্টম্যান বলেছেন, সুপার ইন্টেলিজেন্ট এআই বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে। Anthropic-এর CEO দারিও আমোদেই আরও বড় দাবি করেছেন, এআই ভবিষ্যতে প্রায় সব ধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসা আবিষ্কার করতে সাহায্য করবে।কিন্তু উলফ মনে করেন, বর্তমান এআই আসলে নতুন কোনো জ্ঞান তৈরি করছে না। এটি শুধু মানুষের জানা তথ্যের মধ্যকার সংযোগ তৈরি করছে। যদিও এটি ইন্টারনেটের প্রায় সব তথ্য হাতে পেয়েছে, তবুও এটি বাস্তবিক অর্থে কোনো নতুন গবেষণা চালাতে পারছে না।তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন যে, এআই গবেষণাগারগুলো খুবই বাধ্যগত ছাত্র তৈরি করছে, যারা শুধু শেখানো তথ্যগুলো মনে রাখে, কিন্তু নতুন প্রশ্ন তোলে না। বর্তমানে এআই নতুন কিছু বলার চেয়ে বিদ্যমান তথ্যকেই সাজিয়ে উত্তর দেয়। এটি বইপত্র, বিশেষজ্ঞদের মতামত বা প্রচলিত জ্ঞানের বাইরে গিয়ে নতুন কিছু ভাবতে পারছে না। অথচ বিজ্ঞানে সত্যিকারের নতুন কিছু আবিষ্কার করতে হলে, প্রচলিত বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করা জরুরি। তিনি মনে করেন, এআই-এর উচিত মাঝে মাঝে বলা—”যদি সবাই ভুল হয়ে থাকে?”উলফ মনে করেন, এআই গবেষণার মূল্যায়ন পদ্ধতিতেও সমস্যা আছে। বর্তমান এআই পরীক্ষা করতে যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, তাতে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট, সঠিক উত্তর খোঁজা হয়। কিন্তু বিজ্ঞান বা গবেষণার ক্ষেত্রে অনেক প্রশ্নের একাধিক উত্তর থাকতে পারে, বা একেবারে নতুন কোনো তত্ত্ব উঠে আসতে পারে।তাই উলফ প্রস্তাব করেন, এআই গবেষণার মূল্যায়ন পদ্ধতিকে পরিবর্তন করা উচিত। নতুন পদ্ধতিতে এমন কিছু যোগ করতে হবে, যা বুঝতে সাহায্য করবে এআই সত্যিই সৃজনশীল চিন্তা করতে পারছে কি না, নতুন গবেষণার দিক তৈরি করতে পারছে কি না, এবং এমন প্রশ্ন তুলতে পারছে কি না, যা আগে কেউ ভাবেনি।উলফের মতে, বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সঠিক প্রশ্ন করা এবং যা শেখা হয়েছে, তা চ্যালেঞ্জ করার সাহস রাখা। তিনি বলেন, আমাদের এমন একটি এআই দরকার নয়, যা সব প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করে দিতে পারবে। বরং আমাদের দরকার এমন একটি এআই, যা প্রচলিত বিশ্বাসকে প্রশ্ন করতে পারবে এবং যা সবাই বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে, সেটি ধরতে পারবে।উলফ মনে করেন, এআই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এর চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতার ওপর। যদি এটি কেবল মানুষের শেখানো তথ্যের বাইরে গিয়ে নতুন কিছু ভাবতে না পারে, তাহলে এটি বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে না। তাই ভবিষ্যতে এআই যেন সত্যিকারের সৃজনশীল ও চিন্তাশীল হয়ে উঠতে পারে, সে বিষয়ে গবেষকদের কাজ করা জরুরি।