
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা সামলে আন্তর্জাতিক বাজারে ফিরে আসার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হুয়াওয়ে তাদের প্রথম ট্রাইফোল্ড স্মার্টফোন Mate XT চীনের বাইরে উন্মোচন করেছে। নতুন এই ফোনের প্রাথমিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩,৪৯৯ ইউরো (প্রায় ৩,৬৬০ মার্কিন ডলার)। যদিও হুয়াওয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি যে, কোন কোন দেশে এই ফোন পাওয়া যাবে, তবে তারা গ্রাহকদের স্থানীয় ঘোষণাগুলোর প্রতি নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছে।Mate XT প্রথমে ২০২৩ সালে চীনে উন্মোচিত হয়েছিল এবং বিশ্বের প্রথম ট্রাইফোল্ড ফোন হওয়ায় এটি প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করে। সাধারণত ভাঁজযোগ্য ফোনগুলো কেবল একবার ভাঁজ করা যায়, যা হয় অনুভূমিকভাবে বা উল্লম্বভাবে। কিন্তু Mate XT-তে দুটি ভাঁজের পয়েন্ট রয়েছে, যার ফলে এটি একক, দ্বৈত বা তিনটি স্ক্রিন ডিসপ্লে তৈরি করতে সক্ষম।এক সময় বিশ্বের শীর্ষ স্মার্টফোন নির্মাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিল হুয়াওয়ে। বিশেষ করে প্রিমিয়াম স্মার্টফোন বাজারে এটি অ্যাপল ও স্যামসাং-এর জন্য বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। তবে ২০১৯ সালে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে হুয়াওয়ে উন্নত চিপ এবং গুগলের অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম ব্যবহারের সুযোগ হারায়। এর ফলে তাদের বাজার শেয়ার উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায় এবং আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কার্যত হারিয়ে যায়। গবেষণা সংস্থা IDC-এর তথ্যমতে, বর্তমানে চীনের বাইরে হুয়াওয়ের স্মার্টফোন বাজার শেয়ার মাত্র ০.৩%।তবে চীনের অভ্যন্তরীণ বাজারে হুয়াওয়ে আবারও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালের শেষ দিকে উন্নত চিপযুক্ত নতুন স্মার্টফোন উন্মোচনের ফলে হুয়াওয়ে তাদের বাজার শেয়ার ১২% থেকে ১৭%-এ উন্নীত করেছে। এই প্রবৃদ্ধি অনেকের জন্য বিস্ময়কর ছিল, কারণ বিগত কয়েক বছরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্যই ছিল চীনের উন্নত সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তিতে প্রবেশ বন্ধ করা।এখন হুয়াওয়ে উচ্চমানের ডিভাইসগুলোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারেও ফিরে আসার পরিকল্পনা করছে। কোম্পানিটি আশা করছে, চীনের বাজারে যে শক্তিশালী প্রত্যাবর্তন ঘটেছে, সেটি এবার বিশ্ববাজারেও ধরে রাখা যাবে। IDC-এর ডাটা অ্যানালিটিক্স বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সিসকো জেরোনিমো মনে করেন, Mate XT ব্যাপক সংখ্যায় বিক্রি হবে না, তবে এটি এমন গ্রাহকদের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যারা ব্যয়বহুল ডিভাইস ব্যবহার করে নিজেদের আর্থিক অবস্থান প্রদর্শন করতে চান।তিনি আরও জানান, হুয়াওয়ে মনে করছে যে ট্রাইফোল্ড ফোন একটি অনন্য মূল্য সংযোজন করতে পারবে। যেহেতু এর দাম অত্যন্ত বেশি, তাই এই ফোনের মূল ক্রেতা ধনী শ্রেণির ভোক্তারা। Mate XT মূলত তাদের জন্য তৈরি, যারা ডিভাইসের কার্যকারিতার চেয়ে বিলাসিতার বহিঃপ্রকাশে বেশি আগ্রহী। তবে যদি হুয়াওয়ে Mate XT-এর মাত্র পাঁচ লাখ ইউনিট বিক্রি করতে পারে, তাহলেও প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব অর্জন করতে পারবে, বলে মন্তব্য করেন জেরোনিমো।এই ফোনটি হুয়াওয়ের জন্য চীনের বাইরের বাজারে গ্রহণযোগ্যতার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। কারণ এটি গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করছে না, যা বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম।সাধারণ অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা গুগল প্লে স্টোরের মাধ্যমে লক্ষাধিক অ্যাপ ডাউনলোড করতে পারেন, কিন্তু হুয়াওয়ের নিজস্ব অ্যাপ স্টোরে অনেক জনপ্রিয় গুগল অ্যাপ নেই। চীনের বাইরের গ্রাহকরা এই অ্যাপগুলোর উপর নির্ভরশীল হওয়ায় এটি Mate XT-এর জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে।Counterpoint Research-এর পার্টনার নিল শাহ মনে করেন, গুগলের পরিষেবা না থাকাটা Mate XT-এর জন্য বড় সীমাবদ্ধতা। বিশেষ করে Netflix, Google Play Store বা Google-এর Gemini AI-এর মতো নতুন প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করতে চাওয়া গ্রাহকদের জন্য এটি সমস্যা তৈরি করতে পারে।Gemini হলো গুগলের নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবট, যা সম্প্রতি বাজারে এসেছে। কিন্তু গুগলের পরিষেবা Mate XT-তে অনুপস্থিত থাকায়, এই নতুন ফোল্ডেবল ডিভাইস আন্তর্জাতিক বাজারে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, সেটি নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।Mate XT নিঃসন্দেহে প্রযুক্তির দুনিয়ায় নতুন একটি সংযোজন। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে এর সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করবে গ্রাহকরা গুগলের পরিষেবা ছাড়া একটি প্রিমিয়াম ফোন কিনতে কতটা আগ্রহী, তার উপর।