স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যধিক AI নির্ভরতা বিপজ্জনক হতে পারে। বর্তমান সময়ে অনেকেই অনলাইন বন্ধু বা রোমান্টিক সঙ্গী হিসেবে AI ব্যবহার করছেন, তবে এটি আমাদের বাস্তব জীবনের সামাজিক সম্পর্ক ও সংযোগের ওপর কী প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।সামাজিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বই “The Art and Science of Connection: Why Social Health Is the Missing Key to Living Longer, Healthier, and Happier” এর লেখক কাসলি কিলাম মনে করেন যে, সামাজিক যোগাযোগ অনুশীলনের জন্য AI কিছুটা সহায়ক হতে পারে, তবে এটি মানুষের প্রকৃত সম্পর্কের বিকল্প হওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, AI ব্যবহার করে কথা বলার অনুশীলন করা যেতে পারে, তবে এটি যদি মানুষের বাস্তব জীবনের সংযোগের বিকল্প হয়ে যায়, তাহলে তা সমস্যার সৃষ্টি করবে। তিনি চান, মানুষ বাস্তব জীবনে পরস্পরের সঙ্গে সামাজিক মেলামেশার সুযোগ পাক এবং তা যেন আমাদের জীবনযাপনের স্বাভাবিক অংশ হয়ে ওঠে।তিনি গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছেন যে, কোটি কোটি মানুষ ইতোমধ্যে AI-কে বন্ধু, প্রেমিক, স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে ব্যবহার করছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালে AI কম্প্যানিয়ন অ্যাপগুলোর আয় বছরে ৬৫২% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ব্যবহারকারীদের ব্যয় ৫৫ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই ধরনের অ্যাপের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি, যেখানে মোট আয়ের ৩০.৫% ব্যবহারকারীদের ব্যয় থেকে এসেছে।এই প্রসঙ্গে কাসলি কিলাম বলেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে মিশ্র অনুভূতি পোষণ করেন। একদিকে তিনি উদ্বিগ্ন যে, মানুষ কেন বাস্তব জীবনের সম্পর্কের পরিবর্তে AI-এর ওপর নির্ভর করছে, অন্যদিকে তিনি মনে করেন, যদি এটি বাস্তব সম্পর্কের পাশাপাশি একটি সহায়ক মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে তা ইতিবাচকও হতে পারে। তিনি বলেন, AI চ্যাটবট যেমন ChatGPT মাঝে মাঝে সহায়ক হতে পারে, তবে এটি বাস্তব জীবনের সম্পর্কের বিকল্প হওয়া উচিত নয়।তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, সামাজিক সুস্থতার জন্য বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা জরুরি। যেমন, কেবলমাত্র প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে কথা বললেই চলবে না, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করা, ক্যাফের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলা—এসব কিছুই সামাজিক যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যদি AI এই যোগাযোগের একটি মাধ্যম হয়, তাহলে সমস্যা নেই, কিন্তু যদি AI-ই একমাত্র মাধ্যম হয়ে যায়, তখনই তা উদ্বেগজনক হয়ে ওঠে।তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের একাকীত্বের সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে, কারণ মানুষ এখন ব্যস্ততার মধ্যে সামাজিক সম্পর্কের বদলে স্ক্রিনের দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। তিনি পরামর্শ দেন যে, সময় কাটানোর জন্য সবসময় প্রযুক্তির ওপর নির্ভর না করে, মাঝে মাঝে বন্ধুদের কল করা বা মেসেজ পাঠানো সামাজিক সুস্থতার জন্য ভালো হতে পারে।