
NeuroBionics এর লক্ষ্য হলো স্নায়বিক সমস্যায় ভুগতে থাকা রোগীদের জন্য একটি কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবন করা। প্রচলিত পদ্ধতিতে, ডিপ্রেশন, এপিলেপসি বা পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত রোগীদের মস্তিষ্কে সরাসরি ধাতব ইলেকট্রোড বসানোর জন্য অস্ত্রোপচার করতে হয়। এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অধিকাংশ রোগী এই চিকিৎসা নিতে চান না। নিউরোবায়োনিকস এই সমস্যার সমাধান হিসেবে একটি নতুন প্রযুক্তি তৈরি করেছে, যেখানে মস্তিষ্কে ছিদ্র করার পরিবর্তে রক্তনালী ব্যবহার করে চুলের মতো সরু ফাইবার প্রবেশ করানো হবে।এই ফাইবার তৈরি হয়েছে কার্বন ন্যানোটিউব দিয়ে, যা প্রচলিত ধাতুর তুলনায় কম বিষাক্ত, টেকসই এবং সাশ্রয়ী। ধাতব ইলেকট্রোডের বড় একটি সমস্যা হলো, সেগুলি সহজেই ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং মস্তিষ্কের টিস্যুতে ক্ষতি করতে পারে। তবে কার্বন ন্যানোটিউব সেই সমস্যাগুলি দূর করে এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার উপযোগী।এই ফাইবার বিদ্যুৎ প্রবাহের মাধ্যমে মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে সিগন্যাল প্রদান করে, যা স্নায়বিক কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এটি একটি ছোট ব্যাটারির সাহায্যে কাজ করে, যা পাঁচ থেকে দশ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। ব্যাটারিটি দেখতে এয়ারপড কেসের মতো এবং সহজেই ইমপ্ল্যান্ট করা যায়।নিউরোবায়োনিকসের এই প্রযুক্তি শুধু ডিপ্রেশন বা পারকিনসন্সের মতো সমস্যার জন্য নয়; এটি মস্তিষ্কে ওষুধ পৌঁছানো, টিস্যু ধ্বংস করা এবং স্পাইনাল কর্ডের সমস্যাগুলোর জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি এক ধরনের বহুমুখী চিকিৎসা পদ্ধতি হতে পারে।কোম্পানির সিইও এমজে আন্তোনিনি ও সিটিও নিকি ড্রিসকল, দুজনই এমআইটি এবং হার্ভার্ডের গবেষণা কর্মী ছিলেন। তাদের ১০ বছরের গবেষণার ফসল হিসেবে এই প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। তাদের প্রচেষ্টার ফলে নিউরোবায়োনিকস ইতোমধ্যে তিনটি পেটেন্ট পেয়েছে, যা এমআইটিকেও ছোট পরিসরে অংশীদার করেছে।
২০২৩ সালে এই উদ্যোগ শুরু করার পর, নিউরোবায়োনিকস পাঁচ মিলিয়ন ডলারের তহবিল সংগ্রহ করেছে। এই অর্থ দিয়ে তারা ক্লিনিক্যাল ডিভাইস তৈরির কাজ সম্পন্ন করবে এবং প্রাণীদেহে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেবে।প্রথম পরীক্ষা শুকরের উপর চালানো হবে, কারণ তাদের শারীরিক গঠন মানুষের সঙ্গে অনেকটাই মেলে। পরীক্ষাগুলো সফল হলে, এফডিএ অনুমোদনের মাধ্যমে মানুষের উপর পরীক্ষা শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।কোম্পানির ভবিষ্যৎ লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রযুক্তিকে বাজারে নিয়ে আসা। এটি সফল হলে, বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষের জন্য এটি একটি সহজলভ্য চিকিৎসা পদ্ধতি হয়ে উঠবে।নিউরোবায়োনিকসের উদ্ভাবন ডিপ ব্রেন স্টিমুলেশনের জটিল এবং ব্যয়বহুল পদ্ধতির বিকল্প হতে পারে। বর্তমানে শুধুমাত্র বড় এবং উন্নত হাসপাতালগুলিতে এই ধরণের অস্ত্রোপচার করা হয়, যা বেশিরভাগ রোগীদের জন্য অপ্রাপ্তিযোগ্য।এই প্রযুক্তি রোগীদের জন্য আরও সহজ, নিরাপদ এবং আর্থিকভাবে সাশ্রয়ী চিকিৎসার সুযোগ এনে দিতে পারে। এটি চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন আনতে সক্ষম হতে পারে, বিশেষ করে স্নায়বিক সমস্যাগুলির ক্ষেত্রে।নিউরোবায়োনিকসের উদ্ভাবন এমআরআই পরীক্ষাকেও সহজতর করবে, কারণ এটি ধাতব উপকরণ ব্যবহার করে না। ধাতু এমআরআই ইমেজে উজ্জ্বল দাগ তৈরি করে, যা সঠিকভাবে মস্তিষ্কের পরিস্থিতি বুঝতে সমস্যা তৈরি করে।এটি গবেষণা এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। স্নায়বিক সমস্যাগুলোর চিকিৎসায় আরও নির্ভুলতা এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের সম্ভাবনা তৈরি হবে।নিউরোবায়োনিকসের এই প্রচেষ্টা চিকিৎসা ক্ষেত্রের এক বৈপ্লবিক উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এটি শুধু রোগীদের জীবন মান উন্নত করবে না, বরং চিকিৎসা খাতে সাশ্রয়ী সমাধানের পথ তৈরি করবে।বিনিয়োগকারীরা এই প্রযুক্তিকে একটি সম্ভাবনাময় উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। এটি স্নায়বিক চিকিৎসার বাজারকে বড় পরিসরে উন্মুক্ত করে তুলতে পারে।যদিও এটি বাস্তবায়ন করতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগবে, তবে নিউরোবায়োনিকস এই প্রযুক্তিকে সফল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তাদের উদ্ভাবন চিকিৎসা ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।