বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে শ্রমিক বিক্ষোভে ওষুধশিল্পে অস্থিরতা অব্যাহত রয়েছে। বিক্ষোভের জের ধরে গতকাল বৃহস্পতিবারও অন্তত ২৫টি বড় কারখানায় ওষুধ উৎপাদন বন্ধ ছিল। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান না হলে বাজারে ওষুধের সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এখন পর্যন্ত ওষুধের সরবরাহ স্বাভাবিক আছে।
এদিকে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার পর স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসসহ বেশ কয়েকটি ওষুধ কারখানা আজ শুক্রবার থেকে উৎপাদন শুরুর প্রক্রিয়া শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। যদিও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসসহ আরও কয়েকটি কারখানা কবে খুলবে, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি।
জানতে চাইলে দেশীয় ওষুধ প্রস্তুতকারকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির (বিএপিআই) সভাপতি আবদুল মোক্তাদির বলেন, পুরো ওষুধ খাতের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। অনেক কারখানার উদ্যোক্তা ও কর্মীদের মধ্যে ভয়ভীতি কাজ করছে। সার্বিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ওষুধ খাতের সমস্যারও সমাধান হবে।
ওষুধ শিল্প সমিতির তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রায় ৩০০ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে সচল কারখানার সংখ্যা প্রায় ২০০। দেশের ওষুধের চাহিদার ৯৮ শতাংশ চাহিদা মেটাচ্ছে এসব কারখানা। পাশাপাশি ১৫০টির বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে দেশের কয়েকটি কোম্পানি।
বিভিন্ন দাবি শ্রমিকদের
গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের শ্রমিকেরা গত ২৫ আগস্ট স্থায়ী বেতন, হাজিরা বোনাস বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে শ্রমিকদের এই বিক্ষোভ জেনারেল ফার্মাসিউটিক্যালস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, ইবনে সিনাসহ বিভিন্ন ওষুধ কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে অন্তত ২৫ কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
কারখানাভেদে শ্রমিকেরা ২১টি পর্যন্ত দাবি উত্থাপন করেছেন। শ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে ন্যূনতম ১৫-২৫ হাজার টাকা মাসিক মজুরি নির্ধারণ, ২০-২৫ শতাংশ বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি, দুই বছর পরপর পদোন্নতি, সপ্তাহে দুই দিন ছুটি, ঈদে ৭ দিন ও দুর্গাপূজায় ৩ দিন ছুটি, নির্বাচনের মাধ্যমে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ, উৎপাদন ফ্লোরে মুঠোফোন ব্যবহারের অনুমতি ইত্যাদি।
একাধিক ওষুধ কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, শ্রমিকদের কিছু যৌক্তিক দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়ার পর আবার নতুন নতুন দাবি উত্থাপন করা হচ্ছে। এমন দাবিও আসছে, যেগুলো পূরণ করতে গেলে কারখানার ভেতরে চেইন অব কমান্ড বা শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্পমালিকেরা চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। এই কর্মকর্তারা মনে করেন, শ্রমিকদের দিয়ে অস্থিরতা তৈরির পেছনে একটি গোষ্ঠীর ইন্ধন থাকতে পারে।
শ্রমিকদের দাবিদাওয়া ও বিক্ষোভের মুখে গত শনিবার কালিয়াকৈরে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের একটি কারখানা এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। গতকাল শ্রমিকদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক শেষে পুনরায় উৎপাদন শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্মকর্তারা।
স্কয়ার ফার্মার নির্বাহী পরিচালক (ফিন্যান্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বৈঠকে শ্রমিকেরা কাজে ফেরার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্ত করেছেন। ফলে আজ শুক্রবার থেকে পুনরায় উৎপাদন শুরু হবে বলেন জানান তিনি।
গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শ্রমিকেরা গত সোমবার রাতে প্রায় ৪০০ কর্মকর্তাকে অবরুদ্ধ করেন। মালিকপক্ষ দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে গত বুধবার সকালে ৩৩ ঘণ্টা পর কর্মকর্তাদের ছেড়ে দেন শ্রমিকেরা।
কারখানার কর্মকর্তারা জানান, শ্রমিকদের বুঝিয়ে–শুনিয়ে শান্ত করা হলেও গতকাল কোনো কর্মকর্তা ভয়ে কারখানায় আসেননি। ফলে কবে নাগাদ উৎপাদন শুরু হবে, তা অনিশ্চিত। তবে সবচেয়ে জটিল পরিস্থিতি হচ্ছে শ্রমিকেরা ন্যূনতম মজুরি, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ও ভবিষ্য তহবিল বৃদ্ধি এবং প্রফিট বোনাস দেওয়ার দাবি তোলার পাশাপাশি কিছু কর্মকর্তার তালিকা দিয়ে বলেছেন যে তাঁরা দায়িত্বে থাকতে পারবেন না।
হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, বহু বছর ধরে বাংলাদেশের বাজারে ওষুধের সমস্যা নেই। কিন্তু শ্রমিকদের এসব দাবির কারণে শিল্পকারখানা বন্ধ হলে তাঁদের দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে না। দেশও সমস্যায় পড়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, ‘কারখানার চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে। একধরনের দুর্বৃত্তায়ন চলছে। আমরা কোনো অন্যায় সহায়তা চাই না। আমাদের ওপর যেন কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া না হয়। আমরা অসহায় হয়ে সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই।’
কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করার বিষয়ে ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি আবদুল মোক্তাদির বলেন, ‘কিছু কারখানায় কর্মীদের জিম্মি করে রাখার যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর বিষয়ে আমরা সরকারের কাছ থেকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ আশা করি। ভবিষ্যতে যাতে জিম্মি করার ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করা দরকার। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলে এ খাতের কর্মীদের মধ্যে আস্থা বাড়বে।’
সরবরাহে সংকটের শঙ্কা
আশির দশকের গোড়ার দিকে দেশে ১৬৬টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ছিল। এর মধ্যে ৮টি ছিল বিদেশি। তবে এদের নিয়ন্ত্রণে ছিল বাজারের ৭০ শতাংশ। বর্তমানে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ওষুধের চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করছে। চাহিদার বাকি ২ শতাংশ ওষুধ আমদানি হয়।
ওষুধশিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, গত এক দশকে স্থানীয় বাজার প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। ২০১২ সালে এই বাজার ছিল ৯ হাজার কোটি টাকার। এখন তা ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। জেনেরিক ওষুধের বৈশ্বিক বাজার প্রায় ৪০ হাজার কোটি ডলারের।
বেশ কিছু ওষুধ কারখানা বন্ধ হলেও বাজারে এখনো ওষুধের সংকট তৈরি হয়নি বলে জানা গেছে।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ওরিয়ন ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জেরিন করিম বলেন, সাধারণত এক মাসের ওষুধ মজুত থাকে। তবে গত দুই সপ্তাহে অনেক কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বাজারে কিছু ওষুধের সংকট দেখা দিতে পারে। তার কারণ কিছু কিছু ওষুধ উৎপাদন করে ৩ থেকে ১৪ দিন রেখে দিতে হয়। কোনো মাইক্রোবায়োলজিক্যাল প্রতিক্রিয়া হয় কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার পর এসব ওষুধ বাজারে ছাড়তে হয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে জেরিন করিম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি না হলে শরীরে পুশ করতে হয়, শুরুতে এমন ওষুধের সংকট হতে পারে।
ওরিয়ন ফার্মার কারখানায় উৎপাদন সচল আছে। তবে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১১ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ হাজার ৫০০ টাকা করা এবং অনিয়মিত শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ করার দাবি রয়েছে। মালিকপক্ষ দাবি বাস্তবায়নে এক মাসের সময় চাইলে শ্রমিকেরা তা মেনে নেন।
খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ের ওষুধ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ কেমিস্টস অ্যান্ড ড্রাগিস্টস সমিতির পরিচালক আনোয়ার হোসেন মৃধা বলেন, ‘এখনো ওষুধের সরবরাহে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, কোম্পানিগুলোর ডিপোতে ৭-১৫ দিনের ওষুধ মজুত থাকে। তবে বড় ওষুধ কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় আমরা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। বর্তমান অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হলে শিগগিরই ওষুধের সংকট দেখা দেবে। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণত অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী ওষুধ মজুত করেন। তাতে ওষুধের দাম বেড়ে যায়। তখন ওষুধ কোম্পানিগুলোর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না।’
ওষুধ রপ্তানিও বাধাগ্রস্ত
বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে প্রায় ১৫০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করা হয়। দেশের ৯টি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অস্ট্রেলিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ওষুধ রপ্তানি হয়েছে। আর বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) সময়ে ওষুধ রপ্তানি ছিল ১৬ কোটি ৯২ লাখ ডলারের। এই রপ্তানি তার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি ছিল।
ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব এস এম শফিউজ্জামান বলেন, স্কয়ার, রেনাটা, হেলথকেয়ার, ইনসেপ্টাসহ প্রায় ২৫টি ওষুধ কারখানার উৎপাদন এক সপ্তাহ ধরে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামী সপ্তাহ থেকে কিছু ওষুধের সংকট দেখা দেওয়ার শঙ্কা আছে। পাশাপাশি রপ্তানিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পরিস্থিতি উন্নতিতে করণীয়
শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা নিরসনে গত বুধবার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘যারা ইন্ধন দিচ্ছে, তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।’ সরকার থেকে কঠোর বার্তা দেওয়ার পরও গতকাল সাভারের আশুলিয়ায় অনেক কারখানা শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে ছুটি দিতে বাধ্য হয়।
ওষুধশিল্পের কয়েকজন উদ্যোক্তা বলেন, বর্তমান অস্থিরতায় ওষুধ কোম্পানি দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকলে দেশে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটবে। যার মধ্যে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, শিশুদের ওষুধ, ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, ক্যানসারসহ দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধসহ গবাদিপশুর ওষুধ রয়েছে। এই ওষুধ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিলে চিকিৎসাব্যবস্থা চরম হুমকিতে পড়ে যাবে। অন্য যেকোনো পণ্যের মতো চাইলেই ওষুধ আমদানি করা যায় না। এ জন্য অনেক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। ফলে বর্তমান অস্থিরতায় দীর্ঘ সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ থাকলে তা জীবন রক্ষাকারী প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাবে। বড় ধরনের সংকটও তৈরি হতে পারে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সেন্টার ফর ওয়ার্কার্স সলিডারিটির (বিসিডব্লিউএস) নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার বলেন, সরকার যদি কেন্দ্রীয়ভাবে ঘোষণা দেয় যে বিদ্যমান শ্রম আইন সব কারখানাকে মানতে হবে, তাহলে শ্রমিকদের অধিকাংশ দাবি পূরণ হয়ে যাবে। বাকি দুই-তিনটি দাবি শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান সম্ভব। আর শ্রমিকেরা কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করার যে দাবি করছেন, তা গ্রহণযোগ্য নয়। কর্মকর্তাদের বিষয়ে মালিকপক্ষ যদি তদন্ত কমিটি করে, তাহলে শ্রমিকেরা আশ্বস্ত হবেন। আর বিষয়গুলো তদারকির দায়িত্ব দিতে হবে কলকারখানা অধিদপ্তরকে।
কল্পনা আক্তার আরও বলেন, ‘আমরা একটি পরিবর্তিত সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আমরা সবাই ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রত্যাশা করছি। এই সময়ের শ্রমিকদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে আইনি কাঠামোর মধ্যে থাকতে হবে। আমরা যদি শিল্পের ক্ষতি করি, তাহলে চাকরি হারাব। পরিবর্তনের জন্য সরকার ও মালিকপক্ষকে শ্রমিকদের সময় দেওয়া উচিত।’