
OpenAI-র সিইও স্যাম অল্টম্যান সম্প্রতি সিকোইয়া নামে এক ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চ্যাটজিপিটির ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় স্বপ্নের কথা বলেছেন। একজন শ্রোতা চ্যাটজিপিটিকে আরও ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করার উপায় জানতে চাইলে, অল্টম্যান বলেন, ভবিষ্যতে তিনি চান এই এআই যেন মানুষের পুরো জীবন মনে রাখতে পারে। তিনি বলেন, “আমার স্বপ্ন হলো এমন একটি ছোট্ট অথচ শক্তিশালী মডেল, যার কনটেক্সটে এক ট্রিলিয়ন টোকেন থাকবে – যাতে একজন মানুষের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত রাখা যায়।” “আপনার জীবনের সব কথোপকথন, আপনি যেসব বই পড়েছেন, ইমেইল পড়েছেন, ওয়েবসাইট দেখেছেন – সবকিছু সেই মডেলে থাকবে। এবং আপনার জীবন চলতে চলতেই সেই তথ্য যুক্ত হতে থাকবে,” – তিনি ব্যাখ্যা করেন। তিনি আরও যোগ করেন, “একটি কোম্পানি এই একই ধারণা ব্যবহার করে তাদের সব ডেটা মডেলে রাখতে পারবে।” এই ধারণার পেছনে অল্টম্যানের কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতাও আছে। আলোচনায় তিনি বলেন, এখনকার কলেজ পড়ুয়া অনেক তরুণ-তরুণী চ্যাটজিপিটিকে ‘অপারেটিং সিস্টেম’ হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা তাদের ডেটা, ফাইল আপলোড করে এবং জটিল প্রম্পট দিয়ে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে। তিনি আরও বলেন, তরুণরা অনেক সময় জীবনের বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চ্যাটজিপিটির পরামর্শ নিচ্ছে। “বয়স্করা এটা গুগলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে, আর তরুণরা জীবন উপদেষ্টা হিসেবে,” – বললেন তিনি। ভাবা যায়, ভবিষ্যতে এই এআই আপনার গাড়ির তেলের পরিবর্তনের সময় মনে করিয়ে দেবে, কোন বন্ধুর বিয়েতে কী কিনবেন তা ঠিক করে দেবে, এমনকি আপনি কোন বই সিরিজ পড়ছেন – তার পরবর্তী খণ্ড অগ্রিম কিনেও দেবে।
আমরা যদি একটি বেসরকারি, লাভের পেছনে ছোটা প্রযুক্তি কোম্পানির হাতে আমাদের পুরো জীবন তুলে দিই – সেটা কতটা নিরাপদ? উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গুগল এক সময় “ডোন্ট বি ইভিল” (খারাপ হোয়ো না) স্লোগান নিয়ে শুরু করলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রে একচেটিয়া ব্যবসার জন্য মামলা হারে। এছাড়া চ্যাটবটগুলো কখনো কখনো রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট হতে পারে। চীনা চ্যাটবটগুলো সরকারের সেন্সরের নিয়ম মেনে চলে। আবার সম্প্রতি এলন মাস্কের প্রতিষ্ঠিত xAI-এর চ্যাটবট “Grok” এমন সব রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলেছে, যেগুলোর সঙ্গে প্রশ্নের কোনো সম্পর্ক ছিল না। গত মাসে চ্যাটজিপিটি এত বেশি “হ্যাঁ-মানুষ” হয়ে উঠেছিল যে, ভুল বা বিপজ্জনক সিদ্ধান্তেও তা প্রশংসা করছিল। পরে অল্টম্যান জানান, এই সমস্যা দ্রুত ঠিক করা হয়েছে। এমনকি সবচেয়ে উন্নত এআই মডেলও মাঝে মাঝে একেবারে ভুল তথ্য দিয়ে বসে। তাই, যদিও এমন একটি এআই আমাদের জীবন অনেক সহজ করতে পারে, কিন্তু বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর অতীতের questionable আচরণ আমাদের ভাবিয়ে তোলে। এআই যদি আমাদের সবকিছু জানে – সেটি আমাদের জন্য আশীর্বাদ হতে পারে, আবার অভিশাপও।