আন্তর্জাতিক রুটে চীনের এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলো উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। এর বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বী বিদেশী সংস্থাগুলো চীনের বাজারে ব্যবসায় আগ্রহ হারাচ্ছে। এয়ারলাইনস ইন্ডাস্ট্রির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার কারণে চীনে যেতে রাশিয়ার আকাশপথ ব্যবহার করতে পারছে না বিদেশী সংস্থার ফ্লাইট। এতে দীর্ঘ যাত্রাপথে বাড়তি সময় ও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে। একই সঙ্গে ভ্রমণের চাহিদা কমে যাওয়ায় দেশটিতে কার্যক্রম চালাতে অনাগ্রহী বিদেশী কোম্পানিগুলো।
বর্তমানে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও অস্ট্রেলিয়ার কান্তাস এয়ারওয়েজের মতো কিছু বিদেশী কোম্পানি চীনে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে বড় এয়ারলাইনস দুটি এরই মধ্যে দেশটিতে একাধিক ফ্লাইট বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে।
কভিড-১৯ মহামারীর সময় বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি সময় লকডাউন জারি রেখেছিল চীন। বর্তমানে ওই সময়ের তুলনায় চীনা অভিমুখী ও বহির্মুখী ফ্লাইটের পার্থক্য অনেক বেশি। সে পার্থক্য দিন দিন আরো বাড়ছে। এর অর্থ এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলো চীনে তাদের ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে।
ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ সম্প্রতি জানিয়েছে, ব্যবসায়িক কারণে আগামী অক্টোবর থেকে লন্ডন-বেইজিং ফ্লাইট এক বছরের জন্য বন্ধ রাখবে। এর আগে গত মাসে লন্ডন-হংকং রুটে চলাচল একই সময়ের জন্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এ সময় থেকে চীনা কোম্পানির ফ্লাইট উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে চলাচলের জন্য রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলের আকাশপথ ব্যবহার করছে। এতে যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত হয়ে এসেছে। অন্যদিকে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের এয়ারলাইনসের জন্য নিজেদের আকাশপথ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রাশিয়া। এমনকি কোনো কোনো দেশ নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের দেশটির আকাশপথ ব্যবহার না করার পরামর্শও দিয়েছে।
রাশিয়ার আকাশপথ ব্যবহারের সুবিধা পেয়ে চীনা এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলো অন্যদের তুলনায় ব্যবসায় এগিয়েছে রয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে নিজেদের উপস্থিতি বাড়াতে পারছে তারা। একই সময়ে তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে চীনা বাজারে টিকিটের দাম ও মুনাফার হার কমে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিদেশী এয়ারলাইনসগুলো।
ট্রাভেল ডাটা ফার্ম ওএজির জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক জন গ্রান্ট বলেন, ‘প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় অন্তত ৩০ শতাংশ কম খরচে বিমান ভ্রমণের সুযোগ দিচ্ছে চীনা এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলো। তারা সহজে বিনিময়যোগ্য বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে অত্যন্ত আগ্রহী। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী নিজেদের ব্যবসায়িক পরিধি বিস্তৃতও করতে চায়।’
ফ্লাইটরাডার টোয়েন্টিফোরের তথ্যানুসারে, সপ্তাহে চারদিন বেইজিং-লন্ডন রুটে চলাচল করে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। একই রুটে গত বছর চলাচল শুরু করেছে চায়না সাউদার্ন। তবে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের তুলনায় অন্তত আড়াই ঘণ্টা কম সময় নেয় চীনা কোম্পানিটি।
ভিন্ন কৌশলে এ রুটে চলাচল অব্যাহত রাখবে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। মে মাসে চায়না সাউদার্নের সঙ্গে কোডশেয়ার পুনরায় চালু করেছে তারা। অর্থাৎ ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের টিকিট কেনার মাধ্যমে যাত্রীরা চায়না সাউদার্নের উড়োজাহাজে চলাচলের সুযোগ পাচ্ছেন।
তবে আরেক এয়ারলাইনস সংস্থা ভার্জিন আটলান্টিক জানিয়েছে, দীর্ঘ যাত্রাপথের কারণে আগামী অক্টোবর থেকে লন্ডন-সাংহাই রুটে চলাচল বন্ধ করে দেবে তারা। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও ভার্জিন আটলান্টিক লন্ডনের হিথ্রো উড্ডয়ন-অবতরণের স্লট ব্যবহার করতে পারবে। এটি তাদের জন্য লাভজনক হবে বলে জানা গেছে।
এর আগে জুলাইয়ে চাহিদা স্বল্পতা ও সিট ফাঁকার থাকার বিষয়টি সামনে এনে সিডনি-সাংহাই চলাচল বন্ধ করে দেয় কান্তাস এয়ারওয়েজ। সপ্তাহে দুদিন বেইজিংয়ে চলাচল করত এশিয়াভিত্তিক রয়্যাল ব্রুনেই এয়ারলাইনস। বাজার পরিস্থিতির কারণে সংস্থাটিও চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
এদিকে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুসারে, যাত্রী ও কার্গো পরিবহনের চাহিদা বাড়ায় ২০৪৩ সালের মধ্যে চীনের বাণিজ্যিক বিমানবহর দ্বিগুণের বেশি হারে বিস্তৃত হবে। মার্কিন বিমান নির্মাতা বোয়িং জানিয়েছে, ঊর্ধ্বমুখী চাহিদা মেটাতে দুই দশকের মধ্যে চীনে ৮ হাজার ৮৩০টি নতুন বাণিজ্যিক বিমান প্রয়োজন, যা এ সময়ের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিমান সরবরাহের পাঁচ ভাগের এক ভাগ। চলতি বছর বার্ষিক বিমান পরিবহনের চাহিদা ৫ দশমিক ২ শতাংশ হারে বাড়তে পারে, যা বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় বেশি।