প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেক পুরোনো এবং গভীর, কিন্তু আমাদের কাছে এমন প্রযুক্তি এসেছে, যা হয়তো আমাদের এই সম্পর্কের ধরন আরও ভালোভাবে বুঝতে এবং উন্নত করতে সহায়তা করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এখন এমন একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি, যা মানুষের জন্য অনেক কিছু সহজ করে দিয়েছে, তবে এখন তা প্রাণীদের অনুভূতি এবং আচরণ বোঝার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে।প্রথমত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) মানবিক আচরণ এবং অনুভূতিকে চিনতে এবং বিশ্লেষণ করতে পারে, তবে এটি প্রাণীদের ক্ষেত্রে এখনো নতুন একটি ক্ষেত্র। গবেষকরা প্রাণীদের মুখাবয়ব, চোখ, কান, এবং শরীরের অন্যান্য অংশের গতিবিধি বিশ্লেষণ করে AI সিস্টেমকে প্রশিক্ষণ দিতে চান, যাতে তাদের অনুভূতির কথা বোঝা যায়।এই প্রযুক্তি প্রাণীর মনের অবস্থা, দুঃখ বা ব্যথার মাত্রা, এমনকি তার মানসিক অবস্থা এবং আরও অনেক কিছু চিহ্নিত করতে সাহায্য করতে পারে।একটি উদাহরণ হল, “ইন্টেলিপিগ” সিস্টেম যা একটি গবেষণাগারের বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন। এটি শূকরের মুখাবয়বের ছবি বিশ্লেষণ করে এবং যদি শূকরের কোনো ব্যথা বা অস্বস্তির লক্ষণ থাকে, তবে তারা কৃষক বা পশু পালকদের সতর্ক করে দেয়। এটা কৃষকদের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে কারণ তারা সঠিক সময়ে পশুটির চিকিৎসা শুরু করতে পারবেন।অন্য একটি উদাহরণ হল, হাইফা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছেন, যা কুকুরের মুখের চিহ্ন ব্যবহার করে তাদের অনুভূতির কথা বুঝে ফেলে। এই সফটওয়্যার কুকুরের মনোভাব বা মানসিক অবস্থা পরীক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। এটি মানুষ এবং প্রাণীর আচরণের মধ্যে মিল খুঁজে বের করে কাজ করে।তবে, সবচেয়ে উদ্ভাবনী একটি প্রকল্প হচ্ছে সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের করা গবেষণা। তারা ঘোড়ার মুখাবয়বের ছবি সংগ্রহ করে এবং এগুলো থেকে AI সিস্টেমকে শেখাতে চেষ্টা করেছেন। তারা ঘোড়ার ছবি তুলেছেন যখন তা অস্ত্রোপচার শেষে ব্যথায় ছিল, এবং যখন ব্যথানাশক গ্রহণ করেছে। এই ছবি বিশ্লেষণ করে AI সিস্টেমটি শিখে গেছে, ঘোড়ার চোখ, কান এবং মুখের গতিবিধি দেখে তার ব্যথা বা অস্বস্তির লক্ষণ চিহ্নিত করতে।এই সিস্টেমটি ৮৮% সফলতার সঙ্গে ব্যথার লক্ষণ চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে। অর্থাৎ, এটি খুবই নিখুঁতভাবে বুঝতে পেরেছে, কবে কোন ঘোড়া ব্যথায় ভুগছে।এই ধরনের প্রযুক্তি আমাদের অনেক কিছু শিখাতে পারে এবং আমাদের পশুদের প্রতি সহানুভূতি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। প্রাণীদের অনুভূতি বুঝতে পারলে, আমরা তাদের আরো ভালোভাবে সেবা দিতে পারব এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা করতে পারব। এটি পশুদের প্রতি আমাদের দায়িত্বশীলতা আরও বাড়াবে, কারণ আমরা জানব কখন তাদের সাহায্য প্রয়োজন।এছাড়া, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকরা তাদের পশুদের স্বাস্থ্যের প্রতি আরও তত্পর হতে পারবেন। পশুদের মধ্যে কোনো ব্যথা বা অসুস্থতার লক্ষণ চিহ্নিত করার ফলে, তারা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবেন এবং তাদের প্রাণীকে আরও ভালোভাবে যত্ন নিতে পারবেন।এই ধরনের প্রযুক্তি শুধু যে কৃষি বা পশুপালন কাজে ব্যবহার হবে, তা নয়। এটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রাণী অধিকার, এবং পরিবেশ রক্ষা ক্ষেত্রেও নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, প্রাণীদের ব্যথা বা অস্বস্তির লক্ষণ চিহ্নিত করতে পারলে, আমাদের তাদের প্রতি দয়া ও সহানুভূতির ধারণা আরও শক্তিশালী হতে পারে।এই প্রযুক্তি আরও উন্নত হলে, ভবিষ্যতে আমরা শুধুমাত্র পশুদের শারীরিক অবস্থার চিহ্নই না, তাদের মানসিক অবস্থা বা অস্বস্তির লক্ষণও বুঝতে পারব। এতে প্রাণীদের সাথে মানুষের সম্পর্ক আরও গভীর হবে, এবং তাদের সঠিক যত্ন নেয়া সম্ভব হবেগবেষকরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে প্রাণীর অনুভূতি বুঝতে একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছেন। এটি আমাদের শিখাবে কীভাবে পশুদের সঙ্গে আরও মানবিক এবং সহানুভূতিশীল আচরণ করা যায়। AI-এর সাহায্যে আমরা প্রাণীদের মানসিক অবস্থা আরও ভালভাবে বোঝার সুযোগ পাব, যা আমাদের প্রাকৃতিক বিশ্ব ও প্রাণীজগতের প্রতি দায়িত্বশীলতা বাড়াতে সহায়তা করবে।