
এনক্রিপশন backdoor নিয়ে আলোচনা আবারও উত্থিত হয়েছে যখন খবর আসে যে যুক্তরাজ্য সরকার অ্যাপলের কাছে আইক্লাউডের এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড (E2EE) ডিভাইস ব্যাকআপ সেবা খুলে দেওয়ার দাবি করছে। সরকার বলছে, তারা চায় অ্যাপল একটি “ব্যাকডোর” তৈরি করুক, যাতে সরকারী সংস্থাগুলি ব্যবহারকারীদের ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারে।২০১৬ সালে যুক্তরাজ্য সরকারের “ইনভেস্টিগেটরি পাওয়ারস অ্যাক্ট” (IPA) সংশোধনীর মাধ্যমে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তিশালী এনক্রিপশনের ব্যবহার সীমিত করার জন্য ক্ষমতা পেয়েছে। এই আইনের আওতায় সরকার অ্যাপলের কাছে এমন একটি সিস্টেম খুলে দেওয়ার দাবি করছে যা আইক্লাউড অ্যাডভান্সড ডেটা প্রটেকশন (ADP) সেবার মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষের (এমনকি অ্যাপলেরও) কাছ থেকে রক্ষা করা ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারবে।অ্যাপলের ADP সিস্টেম এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে, অ্যাপল নিজে এনক্রিপশন কী ধারণ করে না। এর ফলে অ্যাপল বলেছে, তাদের কাছে ব্যবহারকারীদের ডেটা সম্পর্কে “জিরো নলেজ” থাকে। এর মানে হল যে, অ্যাপল তাদের ব্যবহারকারীদের ডেটা দেখে না,এটি শুধুমাত্র ব্যবহারকারীর কাছে নিরাপদ থাকে।এখন, ব্যাকডোর বলতে এমন একটি গোপন দুর্বলতাকে বোঝানো হয় যা সিস্টেমে রাখা হয়, যাতে কোনো তৃতীয় পক্ষ তা ব্যবহার করে এনক্রিপশন বা নিরাপত্তা ভেঙে ডেটায় প্রবেশ করতে পারে। যুক্তরাজ্যের সরকার যদি অ্যাপলকে এই ব্যাকডোর তৈরি করতে বাধ্য করে, তবে গোয়েন্দা সংস্থা বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি ব্যবহারকারীর ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারবে।এই ধরনের একটি ব্যাকডোর তৈরি হলে তা নিরাপত্তার জন্য বিপদজনক হতে পারে। একবার যদি এমন একটি দুর্বলতা তৈরি হয়, তখন হ্যাকাররা বা খারাপ উদ্দেশ্যে অন্যরা সেটি ব্যবহার করতে পারে, যেমন পরিচয় চুরি বা সংবেদনশীল তথ্য চুরি করা। আরও খারাপ, এমন একটি দুর্বলতা ভবিষ্যতে র্যানসমওয়্যার আক্রমণের কারণ হতে পারে।“নোবডি বাট আস” (NOBUS) ব্যাকডোর নামে একটি ধারণা রয়েছে। এটি এমন একটি ব্যাকডোরের ধারণা, যেখানে সরকার দাবি করে যে, তারা ছাড়া অন্য কেউ এই ব্যাকডোরের মাধ্যমে ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারবে না। কিন্তু এই ধারণা অনেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা ভুল বলে মনে করেন। কারণ, যদি কেউ একবার প্রবেশ করতে পারে, তখন এটি অন্যদের জন্যও বিপদ সৃষ্টি করতে পারে।ব্যাকডোরের জন্য সরকারের দাবি সাধারণত গোপন থাকে। এটি এমন একটি গোপনীয় প্রবেশপথের মতো, যেখানে জানানো হয় না কিভাবে এবং কখন এটি ব্যবহৃত হবে। যুক্তরাজ্যের আইপিএ’র আওতায়, কোনো ব্যাকডোর তৈরি করার দাবিটি গোপন রাখা হয়, এবং তা সাধারণ মানুষের কাছে প্রকাশ করা হয় না। এটি নতুন নয়, ১৯৯০-এর দশকে, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (NSA) একটি এনক্রিপ্টেড চিপ তৈরি করেছিল যা ব্যাকডোরসহ ছিল, যাতে সরকার গ্রাহকদের যোগাযোগের তথ্য ধরতে পারে। তবে এটি ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়ে এবং সফল হয়নি।সরকারগুলি প্রায়ই এমন দাবি করে যে, ব্যাকডোর তৈরি করা জরুরি, যাতে শিশু নির্যাতন, সন্ত্রাসবাদ বা অন্য কোনো অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। তবে, এই ধরনের পদক্ষেপগুলো গ্রাহকের নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। কারণ, এই ধরনের ব্যাকডোর তৈরি হলে তা কখনোই নিরাপদ থাকতে পারে না, এবং এটি হ্যাকাররা বা অন্য খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে।চীনের তৈরি হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যারেও ব্যাকডোর থাকতে পারে, এমন শঙ্কা রয়েছে। কিছু দেশ যেমন যুক্তরাজ্য, চীনা প্রযুক্তি পণ্যের ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা রেখেছে, কারণ তারা মনে করে, এই প্রযুক্তি পণ্যে ব্যাকডোর থাকতে পারে যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।এটি স্পষ্ট যে, ব্যাকডোর কোনোভাবেই নিরাপত্তার জন্য উপকারী নয়। কারণ, যে কোনো সময় হ্যাকাররা, সরকারের বিপক্ষে বা অন্য ধরনের ক্ষতিকর কাজে তা ব্যবহার করতে পারে। তাই, শক্তিশালী এনক্রিপশন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবসময় গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ব্যবহারকারীর ডেটা রক্ষা করা যায়।