
অ্যাপল বর্তমানে হিউম্যানয়েড এবং অ-হিউম্যানয়েড রোবটের উপর গবেষণা করছে, এমন তথ্য এসেছে। অ্যাপল বিশ্লেষক মিং-চি কুয়ের সাম্প্রতিক রিপোর্টে জানা যায় যে, অ্যাপল দুটি ভিন্ন ধরনের রোবট তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে এক ধরনের হিউম্যানয়েড রোবট (যার আকার মানুষের মতো) এবং অন্যটি অ-হিউম্যানয়েড রোবট, যা মানুষের মতো দেখতে হবে না, কিন্তু ব্যবহারিকভাবে কার্যকরী হবে। এই গবেষণাগুলির মধ্যে একটি গবেষণা পেপারও প্রকাশ করেছে অ্যাপল, যেখানে তারা “নন-অ্যানথ্রোপোমরফিক” (অ-মানব আকৃতির) রোবট নিয়ে আলোচনা করেছে, যা মূলত পিক্সারের ল্যাম্পের মতো ডিজাইন হতে পারে।অ্যাপল যদিও এই রোবটগুলির খুব প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, তবে তারা ভবিষ্যতে বাজারে এক ধরনের কনজিউমার রোবট আনতে চায়। তবে বর্তমান গবেষণা প্রাথমিক পর্যায়ের এবং এই প্রকল্পের এখনও অনেক পথ চলা বাকি। মিং-চি কুয়ে বলছেন, এই প্রকল্পটি এখনও “প্রুফ-অফ-কনসেপ্ট” বা পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। তিনি এই কাজকে অ্যাপল কার প্রকল্পের সাথে তুলনা করেছেন, যেটি খুব শীঘ্রই থেমে গিয়েছিল। কুয়ে আরও বলেছেন যে, তাদের বর্তমান গবেষণার অগ্রগতি এবং প্রযুক্তির উন্নয়ন চক্র দেখে, ২০২৮ সালকে একটি আশাবাদী সময়সীমা হিসেবে দেখা যেতে পারে যখন অ্যাপল তাদের রোবট বাজারে আনতে পারবে। তবে এটি এখনই নিশ্চিত নয়, কারণ রোবট তৈরি একটি অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া এবং এটি সময়সাপেক্ষ হতে পারে।অ্যাপলের রোবট গবেষণায় একটি বিশেষত্ব হলো, সাধারণত অ্যাপল তাদের প্রকল্পের বিষয়ে খুব বেশি তথ্য প্রকাশ করে না, তবে রোবট সম্পর্কিত গবেষণাগুলি তারা প্রকাশ করছে, যা তাদের একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি এবং গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করছে। অ্যাপল জানে যে, রোবটিক্স এবং জেনারেটিভ এআইয়ের মতো প্রযুক্তি খুব দ্রুত বিকশিত হচ্ছে, এবং তাদের গবেষণা পেপার প্রকাশের মাধ্যমে তারা আরও বেশি ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করতে চাচ্ছে। এই ধরনের গবেষণা তাদের নতুন প্রকল্পে সহায়ক হতে পারে এবং প্রযুক্তির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা তৈরি করতে সাহায্য করবে।এছাড়া, অ্যাপল “নন-অ্যানথ্রোপোমরফিক” রোবটের বিষয়ে যে গবেষণা করছে, তার উদ্দেশ্য হলো মানুষ কিভাবে রোবটের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করে, তার উপর বেশি মনোযোগ দেওয়া। কুয়ে বলছেন, অ্যাপল রোবটের শারীরিক আকারের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে রোবটের কার্যকারিতা এবং সেন্সিং হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার প্রযুক্তির উপর। তারা এমন প্রযুক্তি তৈরি করতে চাইছে যা মানুষকে স্বাভাবিকভাবে রোবটের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাক্ট করার সুযোগ দেবে।এদিকে, রোবটিক্স শিল্পের অনেক কোম্পানি, যেমন 1X, Figure, এবং Apptronik, বর্তমানে হিউম্যানয়েড রোবট তৈরি করছে। তবে, এই রোবটগুলি আরও উন্নত এবং নির্ভরযোগ্য করার জন্য অনেক গবেষণা এবং উন্নয়নের প্রয়োজন। এদের মধ্যে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রোবটের দাম এবং তার কার্যকারিতা। এখনও পর্যন্ত, শিল্প ব্যবহারের জন্য তৈরি রোবটগুলি বেশ ব্যয়বহুল, এবং সাধারণ মানুষের জন্য সেগুলি ব্যবহার উপযোগী হতে কিছুটা সময় নেবে। তবে, একবার যখন শিল্পে এই রোবটগুলি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে শুরু করবে, তখন তাদের দাম কমবে এবং আরও সাশ্রয়ী হবে।অ্যাপল রোবট প্রযুক্তি নিয়ে সাবধানী পদক্ষেপ নিচ্ছে। তাদের ইতিহাসে, অ্যাপল সাধারণত নতুন প্রযুক্তি আনার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক, এবং তারা আগে অনেক বড় প্রকল্প যেমন অ্যাপল কার এবং ভিশন প্রো নিয়ে তেমন সফলতা পায়নি। তবে, অ্যাপল মনে হয় এই ক্ষেত্রে খুব ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। তারা এখন তাদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে এবং এটি নিশ্চিত যে তারা ভবিষ্যতে রোবটিক্সের ক্ষেত্রে আরও বড় পদক্ষেপ নেবে। তবে, এই প্রকল্পের ফলাফল দেখা যাবে অনেক পরবর্তী সময়ে, এবং এর জন্য অন্তত আরও তিন বছরের মধ্যে নতুন লিক এবং তথ্য পাওয়া যেতে পারে।অ্যাপল এখনই নিশ্চিত করতে পারছে না যে, তারা কবে এবং কিভাবে একটি রোবট বাজারে আনবে, তবে এটি বলা যায় যে, তারা প্রযুক্তি এবং ইনোভেশনের জন্য ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছে।