
অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স (Apple Intelligence) হলো অ্যাপলের নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা AI প্রযুক্তি, যা ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে প্রথম চালু হয়। আপনি যদি নতুন কোনো iPhone ব্যবহার করে থাকেন, তাহলে হয়তো ইতিমধ্যেই Mail, Messages, Notes-এর মতো অ্যাপগুলোতে এর ব্যবহার লক্ষ্য করেছেন। অ্যাপল এই প্রযুক্তিকে বলছে “AI for the rest of us” অর্থাৎ সবার জন্য সহজ ও নিরাপদ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এটি মূলত জেনারেটিভ AI, যার মাধ্যমে আপনি টেক্সট বা ছবি তৈরি করতে পারেন, লেখার ভুল ধরতে পারেন, মেসেজের সারাংশ পেতে পারেন, এমনকি মেসেজ লেখার স্টাইল পরিবর্তন করতেও পারবেন। Writing Tools নামে এই ফিচারটি Mail, Messages, Pages-এর মতো অ্যাপগুলোতে ব্যবহার করা যাচ্ছে।

ছবি তৈরির ক্ষেত্রেও অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স কাজ করছে। আপনি Genmoji নামের একটি কাস্টম ইমোজি তৈরি করতে পারবেন, যা অ্যাপলের নিজস্ব স্টাইলে তৈরি হয়। Image Playground নামে একটি অ্যাপে আপনি নিজের ইচ্ছামতো ছবি তৈরি করতে পারবেন, যেগুলো Messages বা Keynote-এ ব্যবহার করা যাবে। Siri-র ক্ষেত্রেও অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। আগের চেয়ে এখন Siri অনেক বেশি স্মার্ট এবং বিভিন্ন অ্যাপের মধ্যে একসাথে কাজ করতে পারে। আপনি Siri-কে একটি ছবি এডিট করতে বললে, সে সেটা করে মেসেজে পাঠিয়েও দিতে পারে। এখন Siri আপনার স্ক্রিনে যা চলছে সেটা বুঝে নিয়ে আরও উপযোগী উত্তর দিতে পারে। ২০২৫ সালের WWDC-তে অ্যাপল আরও কিছু ফিচার দেখায়, যার মধ্যে রয়েছে Visual Intelligence এবং Live Translation। Visual Intelligence দিয়ে আপনি যে জিনিসটি দেখছেন তার সম্পর্কে সার্চ করতে পারবেন। Live Translation ফিচার দিয়ে আপনি FaceTime, Messages এবং ফোন কলে কথা বলার সময় লাইভ অনুবাদ পেতে পারেন। এই ফিচারগুলো ২০২৫ সালের শেষ দিকে iOS 26-এর সাথে আসবে। https://youtu.be/PugKQZHPut8
অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স ২০২৪ সালের জুন মাসে প্রথম ঘোষণা করা হয়, এবং এরপর সেপ্টেম্বরে iPhone 16 ইভেন্টে এর আরও বিস্তারিত জানানো হয়। প্রথম দফায় এই ফিচারগুলো iOS 18.1, iPadOS 18.1 এবং macOS Sequoia 15.1-এ চালু হয়। এই সুবিধা পেতে হলে আপনার ডিভাইসে নির্দিষ্ট চিপ থাকতে হবে। যেমন iPhone 16 সিরিজ, iPhone 15 Pro বা Pro Max, iPad Pro (M1 বা পরবর্তী মডেল), MacBook Air, Pro ও iMac (M1 বা নতুন)–এসব ডিভাইসে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করা যাবে। GPT বা Google Gemini-এর মতো এআই সাধারণত ক্লাউডে কাজ করে, তাই ইন্টারনেট ছাড়া চলে না। কিন্তু অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স অনেক ছোট ছোট নির্দিষ্ট কাজের জন্য নিজের তৈরি মডেল ব্যবহার করে, যেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই অফলাইনে কাজ করে। যদি কোনো কাজ বেশি জটিল হয়, তাহলে অ্যাপল তার নিজস্ব Private Cloud Compute ব্যবহার করে, যা নিরাপদ এবং ব্যবহারকারীর তথ্য গোপন রাখে। অনেকে ভাবছিলেন যে অ্যাপল পুরোপুরি ChatGPT ব্যবহার করবে। বাস্তবে, ChatGPT শুধু কিছু নির্দিষ্ট প্রশ্নে সাহায্য করতে ব্যবহৃত হয়, যেমন রেসিপি বা ভ্রমণ পরিকল্পনা। আপনি Siri-কে বলতে পারেন “ChatGPT-কে জিজ্ঞেস করো…” এবং Siri আপনার অনুমতি নিয়ে সেই প্রশ্ন ChatGPT-তে পাঠাবে।

অ্যাপল এখন ডেভেলপারদের জন্য Foundation Models নামে একটি ফ্রেমওয়ার্ক চালু করেছে, যার মাধ্যমে তারা নিজেদের অ্যাপে অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করতে পারবেন। এই ফিচারগুলো অফলাইনে কাজ করে, এবং কোনো ক্লাউড এপিআই খরচ ছাড়াই AI অভিজ্ঞতা দেয়। সব মিলিয়ে, অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স হলো এমন এক নতুন প্রযুক্তি যা আপনার দৈনন্দিন কাজকে আরও সহজ, স্মার্ট এবং নিরাপদ করে তুলবে। এটি আলাদা কোনো অ্যাপ নয়, বরং আপনি প্রতিদিন যেসব অ্যাপ ব্যবহার করেন, সেগুলোর ভেতরেই এই AI চুপিসারে কাজ করবে।